হার্টে ক্যালশিয়াম জমলে তা বাড়িয়ে দেয় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। তবে সময় মতো চিকিৎসায় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে। মুশকিল হল, করোনারি আর্টারিতে ক্যালশিয়াম জমলে তা সাধারণত এনজিওপ্লাস্টিতে কাজ হবে না।
ক্যালসিফিকেশনের অর্থ কী ?
ক্যালসিফিকেশনের অর্থ হল ক্যালশিয়াম জমা হওয়া। ক্যালশিয়াম শরীরের নানা কাজে লাগে। আমরা ছোট বেলায় জীববিদ্যার বইতে পড়েছি হাড়ের জোর বৃদ্ধি করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে ক্যালশিয়ামের বিরাট ভূমিকা আছে।
এই পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে, একজন হার্টের ডাক্তার ক্যালশিয়াম নিয়ে আলোচনা করছেন কেন। এই কাজ তো একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকের । আসুন একটু ভেঙে বলা যাক। পাঠক নিশ্চয় শুনে থাকবেন আমাদের হার্টের করোনারি আর্টারিতে চর্বি এবং অন্যান্য অপদ্রব্য জমা হয়েছে। এই অপদ্রব্যকে প্লাক (Plaque) বলে। সাধারণভাবে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে করোনারি আর্টারিতে প্লাক জমলে স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়াই নিয়ম। তবে কারও কারও নিশ্চয় এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে যে কার্ডিওলজিস্ট রোগীকে বলছেন, হার্টে রক্তবাহী প্রধান ধমনী বা করোনারি আর্টারিতে ক্যালশিয়াম জমা হয়েছে । একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট বা ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলাজিস্ট জানিয়েছেন— রোগীর ক্ষেত্রে স্টেন্ট বসানো অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়। আর তিনি এই কারণে নতুন কিছু হার্ডওয়্যার এবং স্বল্প চেনা জিনিস সম্পর্কে বলে রেখেছেন। নতুন এই জিনিসগুলি লাগবে করোনারি আর্টারিতে জমা হওয়া ক্যালশিয়ামের জন্য বা ক্যালশিয়াম মডিফিকেশনের জন্য।
কার্ডিয়াক ক্যালসিফিকেশন বা করোনারি আর্টারি ক্যালসিফিকেশন কী?
করোনারি আর্টারি ক্যালসিফিকেশন একটি ক্রনিক রোগ। ক্রনিক বলতে আমরা বুঝি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলছে এমন কোনও বিষয়।
কাদের কার্ডিয়াক ক্যালসিফিকেশন বা করোনারি আর্টারি ক্যালসিফিকেশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে কিংবা যাঁদের ডায়ালিসিস চলছে তাঁদের এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বহুদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভোগা রোগীর এনজিওগ্রাফি (angiography) করলে ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের করোনারি আর্টারি ক্যালসিফিকেশন চিহ্নিত হয়।
ক্যালসিফিকেশন পাওয়ার তাৎপর্য কী ?
সাধারণভাবে করোনারি আর্টারিতে প্লাক পাওয়া গেলে বেলুন, ক্যাথিটার বা স্টেন্ট বসালেই কাজ হয়, সেখানে করোনারি আর্টারিতে ক্যালশিয়াম থাকলে সেই ক্যালশিয়াম ভেঙে নিতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ক্যালশিয়াম ডিবাল্কিং। ক্যালশিয়াম ডিবাল্কিং বা ক্যালশিয়াম মডিফিকেশন যদি ঠিকঠাকভাবে না করা হয় অর্থাৎ এনজিওপ্লাস্টি ( angioplasty) করার আগে বা স্টেন্ট বসানোর আগে ওই ক্যালশিয়াম যদি না ভাঙা হয় তাহলে এনজিওপ্লাস্টির ফলাফল তেমন ভালো হবে না। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বেলুন, বিশেষ ধরনের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে আগে প্লাকের গায়ে জমে থাকা ক্যালশিয়াম ভেঙে নিতে হবে। জমাট ক্যালশিয়াম ভাঙার আগে বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বা ইন্ট্রাভাসকুলার আলট্রাসাউন্ড কিংবা ওসিটি দিয়ে বুঝে নিতে হয় ক্যালশিয়ামের ঘনত্ব কতখানি, ওই ক্যালশিয়াম ভাঙতে কোন ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে ।
ক্যালশিয়াম ভাঙার উপায়
ক্যালশিয়াম ভাঙার জন্য আমাদের হাতে দুই থেকে তিনরকমের উপায় আছে। একটি উপায় হল উচ্চ চাপে বেলুনকে ফুলিয়ে তোলা। এই ধরনের বেলুনকে বলা হয় নন কমপ্লায়ান্ট বেলুন ইনফ্লেশন।এছাড়া রয়েছে ওপিএন বেলুন। তবে ৩৬০ ডিগ্রি বা সমগ্র নালিকার গাত্রে গোল হয়ে ক্যালশিয়াম জমে গেলে বা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ক্যালশিয়াম জমলে সেক্ষেত্রে কাটিং বেলুন বা স্কোরিং বেলুন ব্যবহার করা যায়। ৩৬০ডিগ্রি ক্যালসিফিকেশন থাকলে বা ২ মিলিমিটারের বেশি ঘনত্ব বিশিষ্ট ক্যালশিয়াম জমা হলে অরবাইটাল অ্যাথেরেকটমি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুতরাং ক্যালশিয়াম মডিফিকেশন করার পরে বাকি পদ্ধতি কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতেই করা হয়।
তবে সিটি স্ক্যানেও অনেক সময় লেখা থাকে করোনারি আর্টারি ক্যালসিফিকেশন। এক্ষেত্রে ধমনীর মধ্যে কতখানি ক্যালশিয়াম জমেছে তা নির্ণয় করা যায় সিটি স্ক্যানের সাহায্যে। ক্যালশিয়াম জমার মাত্রা যে একক দিয়ে পরিমাপ করা হয় তার নাম আগাটস্টন ইউনিট। সেই ইউনিটের উপরেই নির্ভর করে একজন রোগীর ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক (heart attack) হবে কি না বা হার্টে কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে কি না সেই বিষয়টি।
সুতরাং যাঁদের করোনারি ক্যালশিয়ামের স্কোর শূন্যের বেশি থাকে, তাঁদের সম্ভাব্য ঝুঁকি কতখানি সেই সম্পর্কে রোগীকে বলা হয়। আগাটস্টন ইউনিট ৩০০, ৪০০ প্রভৃতি হতে পারে। এই ইউনিটের উপর নির্ভর করে তাঁর ঝুঁকির স্কোর। অতএব করোনারি আর্টারি ক্যালশিয়াম একজন রোগীর ভবিষ্যতের হার্টের সমস্যা বহু কিছুই জানাতে পারে। শুধু দরকার সঠিক সময়ে রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা করানোর পরে চিকিৎসা শুরু করা।