Search
Close this search box.

অপারেশন ছাড়া হাঁটুর ব্যথা কীভাবে কমাবেন ?

আমাদের কাছে ব্যথার সমস্যা নিয়ে যে সমস্ত মানুষ আসেন, তাদের মধ্যে সবচাইতে বেশি রোগী আসেন হাঁটুর ব্যথা নিয়ে। কেন হয় হাঁটু ব্যথা? নি পেন প্রতিরোধ করার উপায় কী কী রয়েছে? হঠাৎ করে খুব ব্যথা হলে কী করা যায়?

হাঁটু ব্যথার উৎস

হাঁটু একটি বৃহৎ অস্থিসন্ধি। এই অস্থিসন্ধি গঠিত হয়েছে ফিমার, টিবিয়া এবং ফিবিউলা নামক অস্থি নিয়ে। হাড় ছাড়াও এই অস্থিসন্ধিতে  থাকে লিগামেন্ট এবং মাংসপেশি। লকিং এবং আনলকিং নামে বিশেষ পদ্ধতিতে হাঁটু ভাঁজ হয় আবার সোজা হয়। হাঁটু ভাঁজ হয় বলেই একজন ব্যক্তি নিজের পায়ে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা, বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানো কিংবা শোওয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানো— সব কিছুতেই হাঁটুর এই মেকানিজম কাজে আসে। এইভাবে ভাঁজ হওয়ার সময় হাড়ের সন্ধিস্থলে ঘর্ষণ হয়। এই ঘর্ষণ রোধ করার জন্য হাড়গুলির মাথায় থাকে কুশনের মতো তরুণাস্থি। এছাড়া জয়েন্টের সঞ্চালন মসৃণ করার জন্য অস্থিসন্ধিতে থাকে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা বিশেষ তরল। মুশকিল হল, যত বয়স বাড়ে ততই এই তরুণাস্থি ক্ষয়ে যেতে থাকে। ফলে অস্থিসন্ধিতে হাড়গুলির মাথা উন্মুক্ত হয়ে যায়। হাঁটাচলার সময় হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণ হয়। হাঁটু ব্যথার উৎস কিন্তু সেখান থেকেই। ঘর্ষণের কারণে নার্ভে চাপ পড়ে ও শুরু হয় ব্যথা। তরুণাস্থি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে যে শুধু হাড়েই তার প্রভাব পড়ে তা নয়। লিগামেন্ট এবং অস্থিসন্ধি সন্নিহিত মাংসপেশিতেও তার প্রভাব পড়ে। কারণ ব্যথা হলেই একজন ব্যক্তি বিশ্রাম নিতে চান। এর ফলে অস্থিসন্ধি সন্নিহিত পেশিগুলি ধীরে দুর্বল হতে থাকে।

হাঁটু ব্যথার প্রকারভেদ

হাঁটু ব্যথা দুই ধরনের—

i.অ্যাকিউট পেন :-হঠাৎ পড়ে যাওয়া, দুর্ঘটনা থেকে হাঁটুতে চোট লাগা ইত্যাদি কারণে হাঁটুতে ফ্র্যাকচার কিংবা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এসিএল টিয়ার, মিডিয়াল মেনিস্কাস টিয়ার ইত্যাদি হল লিগামেন্ট টিয়ার-এর উদাহরণ। লিগামেন্টে চোট পেলে অপারেশন করানো বলে প্রয়োজন মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে বিকল্প উপায়ও আছে। হাঁটুতে আরও একধরনের হাড় রয়েছে যার নাম প্যাটেলা বা চলতি ভাষায় মালাইচাকি। পড়ে গিয়ে এই প্যাটেলায় চোট লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ii.ক্রনিক পেন :-এই ধরনের ব্যথা একটু বেশি বয়স বা ৫০-৬০ বছর বয়সের পরে দেখা যায়। এক্ষেত্রে হাঁটুর ব্যথার পিছনে সবচাইতে বড় কারণ হল অস্থিসন্ধিতে থাকা তরুণাস্থির ক্ষয়। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত নি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর বাতের কারণে হয়।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

i.ক্রনিক পেন এর ক্ষেত্রে এক্স রে করে হাঁটুতে ক্ষয় হয়েছে কি না সেই সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। সেই অনুযায়ী হাঁটুর সমস্যার গ্রেডেশন করা হয়।

ii,অ্যাকিউট পেন-এর ক্ষেত্রে প্রথমেই এক্স রে করাতে হয়। এই পরীক্ষায় ফ্র্যাকচার থাকলে ধরা পড়ে যায়। ফ্র্যাকচার নেই অথচ ব্যথা আছে এমন ক্ষেত্রে এমআরআই করানোর দরকার পড়তে পারে। তাতে লিগামেন্ট-এ টিয়ার থাকলে তা ধরা পড়ে যায়।

চিকিৎসা

• অ্যাকিউট পেন এর পিছনে ফ্রাকচার দায়ী হলে তখন অপারেশন বা প্লাস্টার করতে হয়। রোগীকে বিশ্রামেও থাকতে হয়। লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে গেলে অপারেশন ছাড়া গতি থাকে না। লিগামেন্ট আংশিকভাবে ছিঁড়ে গেলে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা ইঞ্জেকশন দেওয়া যায়। এছাড়া আরও কিছু ইঞ্জেকশন রয়েছে যা প্রয়োগ করলে লিগামেন্টগুলি নিজের থেকে ক্ষত পূরণ করার চেষ্টা করে। আংশিক লিগামেন্ট টিয়ার-এর ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশনগুলি আশীর্বাদস্বরূপ।

• অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথার ক্ষেত্রে  কিছু ব্যায়াম করতে দেওয়া হয় রোগীকে যাতে তার অস্থিসন্ধি সন্নিহিত পেশিগুলি শক্তিশালী হয়। এছাড়া রোগীকে সিঁড়ি ভাঙতে, ইন্ডিয়ান টয়লেট ব্যবহার না করতে ও হাঁটু মুড়ে বসতে নিষেধ করা হয়। অস্টিওআর্থ্রাটিসের ব্যথা চরমে উঠলে চার-পাঁচদিন একটু বিশ্রাম নিতে বলা হয়। হাঁটুতে ঠান্ডা সেক দেওয়া যায়। কিছু তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বেদনানাশক রয়েছে যা খেতে পারেন। এছাড়া পিআরপি ইঞ্জেকশন, ডেক্সট্রোপ্রোলো থেরাপি ইত্যাদিও রয়েছে। আর রয়েছে কৃত্রিম সাইনোভিয়াল ফ্লুইড-এর ইঞ্জেকশন। তবে গ্রেড ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত অস্টিওআর্থ্রাইটিসে উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করা যেতে পারে। গ্রেড ফোর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে নি রিপ্লেসমেন্ট হল একমাত্র সমাধান। তবে খুব বেশি  দৈহিক ওজন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রেশার খুব বেশি থাকলে তখন সার্জারি করা যায় না। সেক্ষেত্রে জেনিকুলার নার্ভ ব্লক ইঞ্জেকশন দিয়ে হাঁটুর ব্যথার বার্তাবাহী নার্ভগুলিকে অকেজো করে দেওয়া যায়।

মনে রাখবেন

অপারেশন ছাড়াও হাঁটুর ব্যথা কমানোর বহু পদ্ধতি রয়েছে। তবে যত বেশি নিয়ম মেনে চলবেন ততই অপারেশনের সময়টি পিছতে থাকবে। বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে সুষম খাদ্যগ্রহণ, দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তে সুগারের মাত্রায় রাশ টানার মাধ্যমে অস্থিসন্ধির মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ওজন কম থাকলে হাঁটুর উপর চাপ কম পড়বে। অকালে হাঁটুর ক্ষয়ও রোধ করা যাবে।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক