Search
Close this search box.

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) অর্থাৎ মূত্র বা প্রসাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যার কারণ ও চিকিৎসা

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) অর্থাৎ মূত্র বা প্রসাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যা। এক কথায়, প্রসাব নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা। বর্তমান সময়ে এটি একটি খুব সাধারণ সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির urinary sphincter/ মুত্রথলির স্ফিঙ্কটার দুর্বল হয়ে যায় যার ফলে তিনি মুত্র নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এই রোগ প্রতিদিনের কার্যকলাপগুলিকে প্রভাবিত করে এবং রোগীর এই অবস্থা বিব্রতকর হতে পারে। বছর পঞ্চাশ এর পরে  মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়। যদিও সব বয়সের এমনকি পুরুষ ও মহিলা সবার ক্ষেত্রেই এটি কমন হয়ে উঠছে।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স কত রকমের হয় এবং লক্ষণ গুলি কি কি হতে পারে? 

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স মূলত ৩ রকমের দেখতে পাওয়া যায় । যদি আপনি প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কোনটিও প্রকাশ পায় তবে আপনার অবিলম্বে চিকিৎসকের  পরামর্শ নেওয়া উচিত : –

স্ট্রেস  ইনকন্টিনেন্স (Stress Incontinence) -কাশি, হাঁচি, হাসি, এক্সারসাইজ বা ভারী কিছু তোলার সময় আপনার মূত্রাশয়ের উপর চাপ পড়ে। তখন মূত্রথলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কিছুটা ইউরিন বের হয়ে যায়। এই ধরনের অস্বাভাবিকতা কে  Stress Incontinence / স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স বলা হয়ে থাকে।

অর্জ  ইনকন্টিনেন্স (Urge Incontinence) -মূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সারারাত বারবার মূত্রের বেগ অনুভূত হতে পারে। এই অবস্থাকে Urge Incontinence বলা হয়ে থাকে। এই অস্বাভাবিকতাটি কোনও সংক্রমণ বা স্নায়বিক রোগ বা ডায়াবেটিসের মতো আরও মারাত্মক কোন কিছুর জন্যও হতে পারে।

ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স (Overflow Incontinence) – প্রসাব করার পর মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি হয় না যার ফলে  ঘন-ঘন বা অবিরাম মূত্রের আসতে পারে। একে Overflow Incontinence বলে।

উপরোক্ত লক্ষণ গুলি Urinary Incontinence  বা অন্যান্য রোগের সঙ্কেত হতে পারে। এমনকি এর মধ্যে কিছু লক্ষণ ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে।  এইসব ধরনের বিভিন্ন  অসংলগ্নতা ঘন ঘন হলে তা আপনার জীবনযাত্রা কে প্রভাবিত করবে। তাই একদমই অবহেলা না করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। 

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স এর মুখ্য কারণ গুলি কি কি? 

১। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মুত্রথলির পেশীগুলি দুর্বল হতে আরম্ভ করে যেটি  ইনকন্টিনেন্স এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

২। পুরুষদের ক্ষেত্রে, মুত্রথলির চারপাশ দিয়ে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড অবস্থান করে। বয়সের সাথে সাথে এটি আকারে বাড়ে আর যার ফলবশত ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হতে পারে।

৩। প্রোস্টেটের ক্যান্সার বা মুত্রথলির ক্যান্সার

 ৪। কিডনিতে বা মুত্রথলিতে stone।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স

 ৫। কোষ্ঠকাঠিন্য 

৬।  মদ্যপান, ধূমপান, মাত্রাহীন কফিপান, অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া,  দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথার ওষুধ, হাই ব্লাড প্রেশারের বা হার্টের ওষুধ খাওয়া 

৭। মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ ব্যাহত হলে। এই ইস্ট্রোজেন মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় এবং হৃদরোগ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি মুত্রথলি এবং মূত্রনালীর কার্যকারিতাকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু মেনপজের সময় এর ক্ষরণ কম হতে থাকায় মুত্রথলি এবং মূত্রনালীকে ধরে রাখা পেলভিক মাসল দুর্বল হতে থাকে ফলে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বাড়ে।

৮। মুত্রাশয়ের (Bladder) সংক্রমণ বা ইনফেকশান।

৯। স্ট্রোক বা পারকিন্সন্স ডিজিসের মতন সমস্যার কারণে মুত্রথলির নিয়ন্ত্রণকারী নার্ভগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে।

১০। ওবেসিটি বা স্থূলতার কারণে মুত্রথলির উপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হলে মূত্র ধারণ ক্ষমতা কমতে পারে।

১১। অনেকবার গর্ভধারণের ফলে।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স এর চিকিৎসা কিভাবে হতে পারে?

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) এর চিকিৎসা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন, অনিয়মিত হওয়ার ধরণ, রোগীর বয়স, সাধারণ স্বাস্থ্য এবং তাদের মানসিক অবস্থা  ।

১। পেল্ভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ / Kegel Exercise– এটি একধরনের ব্যায়াম যার  মাধ্যমে মুত্রথলি এবং মূত্রনালীর চারপাশের মাংসপেশিগুলির কর্মক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয় ।

Kegel Exercise / Pelvic floor exercise

২। Bladder Training – যখন ইউরিন ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) জন্য আপনার Overactive Bladder দায়ী তখন চিকিৎসকরা আপনার মূত্রত্যাগের সময়, তার frequency অর্থাৎ কত বার যাবেন তার একটা একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেন।

৩। পানীয় ও খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ– ইউরিন  ইনকন্টিনেন্সের (Urinary Incontinence) ফলে রাতের ঘুম ব্যাহত হয়। এই কারণে সন্ধ্যের পর রোগীকে কম জলপানের পরামর্শ দেওয়া হয়, এছাড়া চা, কফি ও মদ্যপান থেকে দুরে থাকতে বলা হয়।

৪। ওষুধের প্রয়োগ– ইউরিন  ইনকন্টিনেন্সের (Urinary Incontinence) ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম ওষুধ (Anticholinergic, Alpha-blockers) এর মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়।যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণের এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে Laxative জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৫।আধুনিক চিকিৎসা– আধুনিক রেডিয়েশান থেরাপি  ( Radiofrequency therapy) এবং Botox ইঞ্জেকশান প্রয়োগের মাধ্যমে মুত্রথলি এবং মূত্রনালীর চারপাশের মাংসপেশিগুলিকে পুনরায় আগের মতন কর্মক্ষম করে তোলা হয়। এইধরনের চিকিৎসা খুবই কার্যকারী বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে।

এছাড়াও এখন কিছু আধুনিক যন্ত্র (Urethral insert, Urinary Catheter) প্রয়োগ করে মূত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সার্জারি / Surgery – অনেকক্ষেত্রেই শুধু মাত্র ওষুধের দ্বারা এর চিকিৎসা সম্ভব হয় না সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সার্জারির পথ বেছে নেন।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স থেকে দুরে থাকবেন কি ভাবে ?

ইউরিন ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) সর্বদা নিয়ন্ত্রণ যোগ্য নয়। কিন্তু তাও কিছু কিছু ভাল অভ্যাস এর ঝুঁকি কমাতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ অভ্যাস করা,  ফাইবার যুক্ত খাবার দাবার  খাওয়া ( যা কোষ্ঠকাঠিন্য কে নিয়ন্ত্রণে রাখবে), অত্যধিক মদ্যপান ও ধূমপান ত্যাগ করা, অতিরিক্ত কফি বা অ্যাসিড যুক্ত খাবার বন্ধ করা– এই ধরণের অভ্যাস গুলি আপনাকে শুধু  ইউরিন ইনকন্টিনেন্স (Urinary Incontinence) ই নয়, যে কোন শারীরিক অসংলগ্নতা থেকে দূরে রাখবে।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক