Search
Close this search box.

সারাদিনের কাজের ফাঁকেই একটা ছোট্ট ঘুম বা ন্যাপ ভালো নাকি মন্দ ?

ন্যাপ কি ?

চট জলদি কিছুক্ষণেই ঘুম অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে ন্যাপ আপনাকে করে তুলবে তরতাজা। বাড়িয়ে দেবে আপনার কর্মক্ষমতা। করে তুলবে সজাগ, ভালো করে দেবে আপনার মেজাজ। আর এইসবের জন্য দীর্ঘ ঘুমের কোনো প্রয়োজন নেই, বরং দশ থেকে কুড়ি মিনিটের ছোট্ট ঘুমেই ফল মিলবে হাতেনাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকক্ষণ ধরে একটানা ঘুম আমাদের অস্থির ও তুলনায় বেশি ক্লান্ত করে তোলে।

অল্প সময়ের ঘুম অর্থাৎ পাওয়ার ন্যাপের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের ঘুমের তফাৎ

আসলে অল্প সময়ের ঘুম অর্থাৎ ন্যাপ আপনাকে নিয়ে যায় ঘুমের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্তরে। আর এর ফলে আপনি হয়ে উঠবেন তরতাজা ও অধিক কর্মক্ষম। আসলে সঠিকভাবে যদি ঘুম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পাঁচটি স্তর সম্পূর্ণ হয়। তাই, পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে একটানা ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে এতটাই শান্ত করে দেয় যে বাইরের কোনো উদ্দীপনার ক্ষেত্রেও সেই সময় মস্তিষ্ক কম সাড়া দেয়।

ছোটো ছোটো ন্যাপের গুরুত্বপূর্ণদিক গুলো হল :

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনের বেলার দশ থেকে তিরিশ মিনিটের এই ছোটো ঘুম আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের এই ছোটো ঘুমের ফলে আমাদের শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ন্যাপের ফলে কোনো বিষয়ের ওপর ফোকাস করার ক্ষমতা ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ন্যাপের ঠিক পরেই আমাদের নতুন কিছু শেখার ইচ্ছাশক্তি অনেকখানি বেড়ে যায়।

২০১৯ সালে আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি তাঁদের সায়েন্টিফিক সেশনে পাওয়ার ন্যাপের উপকারীতার কথা তুলে ধরেন। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনধারায় ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থাৎ লবণ কম খাওয়া বা মদ্য পান কম করার পাশাপাশি দুপুরে ন্যাপ নিলে তা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, দুপুরের ছোটো ঘুম উচ্চ রক্তচাপ কমায় প্রায় ৫এমএম এইচজি। যা উচ্চ রক্তচাপের কম মাত্রার ওষুধের (৫ – ৭এমএম এইচজি) মতোই কাজ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাত্র ২ এমএম এইচজি দশ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। মুড বা মেজাজ ঠিক রাখতেও কার্যকরী এই অল্প সময়ের ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ। দুপুরের ছোটো ঘুম আপনার সন্ধ্যার ক্লান্তি ও একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে দীর্ঘ ঘুম নাহলেও খুব অল্প সময়ের এই ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ শুধু যে আপনাকে চনমনে করে তোলে তাই নয়, হতাশা কাটাতেও সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কুড়ি মিনিটের বেশি ঘুম আপনার শরীরে জড়তা আনে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যার পোশাকি নাম স্লিপ ইনারশিয়া। এছাড়াও মস্তিষ্ককে অস্থির করে তোলে। আর এই অস্থিরতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায় যদি আপনি ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত হন। দেরি করে ঘুমানো এবং একইসাথে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘুমানো আপনার রাতের ঘুমকে বিঘ্নিত করে।

দিনের বেলায় দীর্ঘক্ষণ ঘুম আপনার কার্ডিওভাসকুলার অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে। ২০১৫ সালের মেটা এ্যানালিসিস অনুযায়ী দেখা গেছে, যাঁরা দিনের বেলায় একঘন্টার বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকেন তাঁদের হার্ট জনিত সমস্যায় মৃত্যুর হার বেশি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বয়স ও স্বাস্থ্যের সাথে সাথে ঘুমেরও একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

দিনের কোন সময়ের ন্যাপিং সবথেকে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত?

এর উত্তরে বলা যেতে পারে এটা ঘুমের সময় ও বয়সের ওপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দুপুর তিনটের আগে ঘুম স্বাস্থ্যকর। কারণ বিকেল তিনটের পরে ঘুমালে তা রাতের ঘুমকে বিঘ্নিত করে।

বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপিংয়ের সময় কতক্ষণ হওয়া উচিত ?

বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের সময় বিভিন্ন হয়। ন্যাপিংয়ের সময় কতক্ষণ হওয়া উচিত তা নির্ভর করে আমাদের শরীরে কতোটা ঘুমের দরকার এবং কতোটা ঘুম হচ্ছে তার ওপর।

শিশুদের ক্ষেত্রে

০ – ৬ মাস বয়স : দিনের বেলায় দুই থেকে তিনবার, তিরিশ মিনিট থেকে দুই ঘন্টা সময় ধরে।

৬ – ১২ মাস বয়স : দিনে দুবার কুড়ি মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার জন্য।

১ – ৩ বছর বয়স : দিনে একবার এক থেকে তিন ঘন্টার জন্য।

৩ – ৫ বছর বয়স : দিনে একবার এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য।

৫ – ১২ বছর বয়স : যদি রাতে দশ থেকে এগারো ঘন্টার ঘুম হয় তাহলে দিনে ন্যাপের প্রয়োজন নেই। তবে রাতে ঘুম কম হলে দিনে দশ কুড়ি মিনিট থেকে এক দেড় ঘণ্টার ঘুম লাভদায়ক হয়ে থাকে।

গবেষণা জানাচ্ছে, প্রৌঢ়দের ক্ষেত্রে দিনের এই ছোটো ঘুম বেশ ফলদায়ক।

বেশি ঘুম বা কম ঘুম আমাদের শরীরে কি প্রভাব বিস্তার করে ?

দেখা গেছে, বেশি ঘুম বা কম ঘুম দুইই আমাদের শরীরে সমস্যা ডেকে আনে। যেমন জেগে ওঠার পর বেশি ঘুম আমাদের শরীরকে শুধু অস্থিরই করে তোলে না তার সঙ্গে ১) হৃদজনিত সমস্যা ২) মেদ বৃদ্ধি ৩) টাইপ টু ডায়াবেটিস ও ৪) মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে।

আবার কম ঘুম ও আমাদের শরীরে সমস্যা তৈরি করে। যেমন ১) ওজন বৃদ্ধি ২) হৃদজনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস , উচ্চ রক্তচাপ ৩) যৌন ক্ষমতা হ্রাস ৪) দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ৫) স্মরণ শক্তি হ্রাস ও ৬) মনোযোগের সমস্যা তৈরি করে।

পরিশেষে বলা যেতে পারে,আজকের দৌড়ঝাঁপের যুগে ন্যাপিং কারো কারো কাছে বিলাসিতা হলেও যদি আপনি দিনের বেলায় দশ মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারেন তাহলে স্বাস্থ্যজনিত অনেক সমস্যাকেই আপনি জীবন থেকে ছেঁটে ফেলতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক