বসে থাকলেই পা ফুলছে? কেন হয় এমন সমস্যা? চিকিৎসকরা বলছেন বয়স অনুসারে পা ফোলার সমস্যার সঙ্গে যোগ থাকতে পারে একাধিক অসুখের। কী করবেন? জানুন।
কম বয়সি থেকে বয়স্ক মানুষ, অনেকরই পা ফোলার সমস্যা তৈরি হতে দেখা যায়। অবস্থা মাঝেমধ্যে এমনই দাঁড়ায় যে মাটিতে পা ফেলতেও সমস্যা তৈরি হয়। স্বাভাবিভাবেই পা ফোলার অসুখ নিয়ে প্রথম প্রথম কেউ মাথা ঘামান না। তবে সমস্যা বাড়তে থাকলে তখন বিষয়টি ফেলে রাখা যায় না। প্রশ্ন হল কেন পা ফোলে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, মূলত ফ্লুইড বা তরল জমে পা ফোলার সমস্যা তৈরি হয়। এখন তরল আসে কোথা থেকে পায়ে? আমাদের শরীরের কিছুটা মাত্রায় তরল থাকে ইন্ট্রা ভাসকুলার স্পেস বা রক্তনালীর অন্দরে। কিছুটা আবার থাকে ইন্টার টিসিয়াল স্পেস বা কোষের ফাঁকে ফাঁকে। এছাড়া কোষের অন্দরে ফ্লুইড থাকে। অবশ্য আমাদের আজকের আলোচনায় কোষের অন্দরের জলের সঙ্গে তেমন কোনও যোগ নেই।
বলে রাখি, রক্তবাহী নালীর ভিতরে যে তরল থাকে, তা রক্তনালী থেকে বেরিয়ে এসে জমে যায় কোষের মধ্যে থাকা ফাঁকের মধ্যে। পা ফোলার সমস্যার সূত্রপাত ঘটে ঠিক এভাবেই।
কেন ফ্লুইড বের হয় রক্তবাহী নালী থেকে?
আমাদের শরীরের মূল অঙ্গগুলির সঙ্গে রক্তবাহী নালীতে থাকা তরলের যোগ রয়েছে। এই প্রধান অঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ না করলে পায়ে তরল জমার ভয় থেকে যায়। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে কোন কোন অঙ্গের অসুখে এমন সমস্যা দেখা যায়? দেখা যাক—
দেখা গিয়েছে হার্ট ফেলিওর, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যার কারণে শরীরের নানা ধরনের কাজকর্মে বিপত্তি ঘটে। সেখান থেকে তৈরি হতে পারে পা ফোলার মতো জটিলতা।
আরও কিছু কারণ
কিডনির রোগ হলে শরীর থেকে ক্রমশ প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার যেতে থাকে। এমন অবস্থায় শরীরে প্রোটিন বা অ্যালবুমিনের অভাব দেখা দিতে পারে। সেখান থেকেও পা ফোলার সমস্যা তৈরি হয়। আবার সঠিক পুষ্টির ঘাটতি থাকলেও শরীরে অভাব দেখা দেয় প্রোটিনের। সেই কারণেও পা ফোলার সমস্যা তৈরি হয়। আবার কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও ফুলতে পারে পা।
সাধারণ কারণগুলি
বহু বয়স্ক মানুষ চিকিৎসকের চেম্বারে এসে বলেন— ‘ডাক্তারবাবু, পা ঝুলিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ারে বসেছিলাম। তাতেই দেখলাম পা ফুলে গিয়েছে। আবার একটু হাঁটাচলা করার পর ফের পা স্বাভাবিক হয়ে গেল। কী যে করি!’
এক্ষেত্রে ডাক্তারবাবু ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁর আর কোন কোন শারীরিক সমস্যা আছে। কারণ পা ফোলার সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে কি না বা বুকে ব্যথার মতো অনুভূতি আছে কি না অথবা বুকে চাপ চাপ বোধ আছে কি না তাও বোঝা প্রয়োজন। এই ধরনের উপসর্গ হার্টের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। এছাড়া কিডনি ও লিভারের সমস্যাতেও পা ফুলতে পারে। তাই কোনও দিকই অবহেলা করা যাবে না।
অন্য কোনও শারীরিক অসুখ না থাকলে এবং রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বুঝতে হবে, শুধুমাত্র বয়স জনিত কারণেই পা থেকে ফ্লুইড উপরে পাঠানোর ক্রিয়া দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে পৃথিবীর গ্রাভিটির কারণে কারণে বয়স্ক মানুষটির রক্তবাহী নালী থেকে জল বেরিয়ে পায়ের কোষের মাঝে যে ফাঁক থাকে সেখানে জমে যাচ্ছে। এই কারণে দাঁড়িয়ে থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে ওই ব্যক্তির পায়ে জমছে ফ্লুইড। এমন ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, রাতে বিছানায় শোওয়ার সময় পায়ের নীচে বালিশ রেখে দিতে। তারপরেও পা ফোলরা সমস্যা হলে কিছু পরীক্ষা করাতে দিতে হবে।
পা ফোলার সমস্যা হলে কী কী পরীক্ষা করানো যেতে পারে?
বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব হলে ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি করিয়ে নিন হার্টের সমস্যা জানতে। আবার কিডনির কার্যকারিতা জানতে করান ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন টেস্ট। লিভার ফাংশন টেস্টও করা দরকার। ইউরিনের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে কি না তার পরীক্ষাও করাতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক থাকলে চিন্তা নেই। অবশ্য দুই থেকে তিন বছর অন্তর পরীক্ষাগুলি করাবেন। টেস্ট করানোর সুবিধা একটাই, কোনও রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করলে, আগেভাগেই তা ধরা পড়বে ও চিকিৎসা শুরু করা যায়।
পুরুষ ও মহিলা উভয়েই পা ফোলার সমস্যায় ভোগেন। তবে আমাদের দেশে মহিলারা অপুষ্টিতে ভোগেন বেশি। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে পা ফোলার সমস্যাও বেশি হয়।