উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ৭টি ঘরোয়া উপায়

আমাদের জীবনে এখন রোগের শেষ নেই। প্রেশারের রোগী এখন ঘরে ঘরে। বলা বাহুল্য, সব ধরনের রোগের মধ্যে হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই এই রোগ নিয়ে প্রতিটি মানুষকে সতর্ক হতে হবে। বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ কী?

রক্তবাহী নালীর ভিতর থেকে প্রবাহিত হয় রক্ত। এবার রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তবাহী নালীর ভিতরের দেওয়ালে তৈরি হয় চাপ। এটাই হল রক্তচাপ (High Blood Pressure)। এক্ষেত্রে ১২০/৮০ হল স্বাভাবিক রক্তচাপ। তবে এর থেকে বেশি হলেই সমস্যা। এক্ষত্রে বিশেষজ্ঞদের কথায়, ১৩০/৯০ হলেই বুঝতে হবে যে হাই ব্লাড প্রেশার রয়েছে। যখন রক্তচাপ বেশি থাকে, তখন রক্ত ধমনী দিয়ে আরও জোরে চলাচল করে। এটি ধমনীতে অবস্থিত সূক্ষ্ম টিস্যুতে চাপ বৃদ্ধি করে এবং রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, একেবারে নিঃশব্দ ঘাতকের মত রোগটি যে শরীরে বাসা বাঁধে শুধু তাই নয়, হার্টের কোন বড়সড় ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত হাইপারটেনশনের উপসর্গ সম্পর্কে বোঝাও যায় না সচরাচর।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়

১) চলাফেরা করা:- নিয়মিত হাঁটাচলা করা এবং ব্যায়াম করা সুস্থ জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত শারীরিক কসরত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি আপনার মানসিক ও শারীরিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করে। হাইপারটেনশনের সাথে সাথে এটি আপনার ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। আপনি দীর্ঘক্ষণ কোনো কাজ না করে থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে ওয়ার্কআউট শুরু করুন। তারপর আস্তে আস্তে আপনার ওয়ার্কআউটের গতি এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাছাই করুন। জিম পছন্দ নয়? আউটডোর ওয়ার্কআউট শুরু করুন, যেমন, জগিং বা সাঁতার। এগুলো নিয়মিত করলেই ধীরে ধীরে উপকার মিলবে। এক্ষেত্রে সবার আগে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চলাফেরা করা। কিছু না পারলে অন্তত হাঁটাচলা করাটাও জরুরি।

২) ড্যাশ (DASH) ডায়েট ফলো করা:- ড্যাশ ডায়েট কথার অর্থ হল ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ স্টপ হাইপারটেনশন (DASH)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই ডায়েট অনুসরণ করলে আপনার সিস্টোলিক রক্তচাপ 11 mm Hg পর্যন্ত কমে আসতে পারে।

এই ড্যাশ ডায়েটে কী কী রয়েছে:

• ফল, সবজি, এবং শস্য বা whole grains।

• কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, চর্বিহীন মাংস, মাছ এবং বাদাম।

• যেসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যেমন প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং চর্বিযুক্ত মাংস। এইসব খাবার বাদ দেওয়া।

• ড্যাশ ডায়েট ডেজার্ট এবং মিষ্টি পানীয় যেমন সোডা, জুস প্রভৃতি খাবারের প্রতি আমাদের যে আকর্ষণ তা হ্রাস করতে সাহায্য করে।

৩) লবণ সীমিত করা:- বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। সোডিয়ামও স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এমনকি সোডিয়াম গ্রহণের দৈনিক পরিমাণে সামান্য হ্রাসও উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ মিমি এইচজি চাপ কমিয়ে দিতে পারে। সোডিয়াম গ্রহণের প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। তথাকথিত সুস্থ ব্যক্তিরও লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া সীমিত করা উচিত। সাধারণ ব্যক্তিদের দিনে ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। আপনার ডায়েটে সোডিয়াম কম করতে, লবণের পরিবর্তে খাবারে স্বাদ যোগ করে এমন হার্বস ও মশলা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক সময় সোডিয়ামের পরিমাণ বেশী থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই সবসময় খাবারের লেবেল পড়তে ভুলবেন না এবং সম্ভব হলে কম সোডিয়াম বিকল্প বেছে নিন।

৪) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা :- ওজন আর রক্তচাপ যেন একে অপরের সমানুপাতিক। অর্থাৎ একটি বৃদ্ধি পেলে ওপরটিও বেড়ে যায়। যাঁদের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আছে তারা যদি তাঁদের ওজনের মাত্র ৫ কেজি ওজনও কমাতে পারেন তাহলেও সেটা তাঁদের রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রসঙ্গে বলা দরকার, মাঝারি ওজন বজায় রাখার জন্য আপনার কোমরের উপর নজর রাখা উচিৎ, যাতে তা অত্যধিক বৃদ্ধি না পায়। কারণ আপনার কোমরের চারপাশে থাকা অতিরিক্ত চর্বি, যাকে ভিসারাল ফ্যাট বলা হয়, তা হার্টের উপর খুব ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ দীর্ঘমেয়াদী গুরুতর কোনো কঠিন রোগের কারণ হতে পারে। সাধারণভাবে, পুরুষদের তাদের কোমরের পরিমাপ 40 ইঞ্চির কম রাখা উচিৎ, যেখানে মহিলাদের উচিৎ 35 ইঞ্চির কম রাখা।

৫) স্বল্প মাত্রায় মদ্যপান করা ও ধূমপান বন্ধ করা: সিগারেট এবং অ্যালকোহল উভয়ই উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। অ্যালকোহল এবং নিকোটিন উভয়ই সাময়িকভাবে রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। যেহেতু উভয় জিনিসই স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বলে জানা যায়, তাই উপকারের জন্য এগুলো ত্যাগ করা ভালো। একেবারেই ধূমপান ছেড়ে দিন। মদ্যপান যদিও বা করেন তবে সেটাও খুব সীমিত ভাবে। হালের গবেষণা বলছে অ্যালকোহল প্রায় ১৬ শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। নিকোটিনও আমাদের রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি করে।

৬) রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলা: পরিশোধিত কার্বস এবং চিনিও উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। রুটি এবং সাদা চিনির মতো খাবারগুলি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ যাঁদের আছে তাঁদের লো-কার্ব ডায়েটে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিশোধিত ময়দার বদলে হোল গ্রেন এবং সাদা চিনির বদলে গুড় বা মধু খাওয়া ভালো।

৭) মানসিক চাপ কমানো:- মানসিক চাপ সাময়িকভাবে আপনার রক্তচাপ বাড়াতে পারে। মানসিক চাপের কারণ আপনার কাজ, সম্পর্ক বা আর্থিক জটিলতা হতেই পারে। তবে একবার আপনি আপনার স্ট্রেসের উৎসটি সম্পর্কে জানতে পারলে, আপনি নিজেই সেই সমস্যাটির সমাধান করার উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন উপায়ে আপনার মানসিক চাপ কমানোর জন্য চেষ্টা করতে পারেন, যেমন কিছু গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, ধ্যান করা বা যোগ অনুশীলন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। সব মিলিয়ে বলা যায়, উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) একটি বিপজ্জনক শারীরিক অবস্থা যা সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। রক্তচাপ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। একবার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ধরা পড়লে দেরি না করে প্রতিকার করা দরকার। অন্যথায় এটি মারাত্মক হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.