Search
Close this search box.

Written by

Health and Wellness Blogger

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগীদের খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিত?

                       উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা প্রায়শই ওষুধের সাহায্য নিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের প্রকৃতিতেই এমনকিছু সবজি ও ফল আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে আমরা সহজেই হাইপারটেনশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। কী সেই সবজি বা ফলসমূহ? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

        বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ২০ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ হাইপারটেনশন অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। আদতে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ হলেও কেবলমাত্র জীবনযাপনের কায়দা পাল্টে তাকে রুখে দেওয়া যায় না। তবে উচ্চ রক্তচাপের মতো ভয়াল অসুখ ঠেকাতে চাইলেও যেহেতু, সব নিয়ম মেনে চলার ফুরসত আমাদের হয় না, তাই একটু বেশিই নজর রাখতে হয় খাবার পাতে।           

           সবসময়েই একটি পুষ্টিকর ডায়েট অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয় উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য। রক্তচাপ কমানোর জন্য এবং সর্বোত্তম মাত্রা বজায় রাখার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে যে আপনার খাদ্যতালিকায় নির্দিষ্ট কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়, বিশেষ করে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো নির্দিষ্ট পুষ্টির খাদ্য আপনার উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমিয়ে আনে।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগীদের খাদ্যতালিকা

১) সাইট্রাস ফল:

গ্রেপফ্রুট, কমলালেবু সহ সাইট্রাস ফলগুলি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে   থাকে।এগুলিতে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপের মতো হৃদরোগের ঝুঁকির কারণগুলিহ্রাস করে আপনার হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। ১০১ জন জাপানী মহিলার উপর একটি ৫ মাসের গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন হাঁটার সময় বিভিন্ন লেবুর মিলিত রস খাওয়ায় তাদের SBP হ্রাস পায় যা উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল। গবেষকরা অবশ্য সেইজন্য লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড এবংফ্ল্যাভোনয়েড সামগ্রীকে দায়ী করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে কমলা এবং আঙ্গুরের রস পান করলে রক্তচাপ কমতে পারে। তবুও, অনেক সময় আঙ্গুরের রস সাধারণ রক্তচাপ-কমানোর ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে,তাই এই ফলটি আপনার ডায়েটে যোগ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।

২) স্যালমন এবং অন্যান্য চর্বিযুক্ত মাছ:
চর্বিযুক্ত মাছ হল ওমেগা-৩ ফ্যাটের একটি উৎকৃষ্ট উৎস, যা উল্লেখযোগ্যভাবে হার্টের স্বাস্থ্যর উপকার করে। এই চর্বিগুলি রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তনালী-সংকোচনকারী যৌগগুলির মাত্রা হ্রাস করে যার নাম অক্সিলিপিন। গবেষণায় বলা হয়েছে যে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ চর্বিযুক্ত মাছ বেশি খাওয়ার সাথে রক্তচাপের মাত্রা কমানোর সম্পর্ক আছে।

৩) সুইস চার্ড:
সুইস চার্ড হল একটি সবুজ পাতাযুক্ত সবজি যা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সহ রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রক পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। এক কাপ (১৪৫ গ্রাম) রান্না করা সুইস চার্ড আপনার শরীরের প্রতিদিনের পটাশিয়ামএবং ম্যাগনেশিয়ামের চাহিদার যথাক্রমে ১৭% এবং ৩০% সরবরাহ করে। ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্যও অপরিহার্য। এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি হৃৎপিণ্ড এবং ধমনী কোষে ক্যালশিয়ামের চলাচলকে ব্লক করে, রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে দেয়।

৪) কুমড়োর বীজ:
কুমড়োর বীজ ছোট হতে পারে, কিন্তু পুষ্টির ক্ষেত্রে এগুলি যেন এক একটি পাওয়ার প্যাক। এগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবংআর্জিনাইন, নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা রক্তচাপ কমানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কুমড়ো বীজের তেল উচ্চ রক্তচাপের জন্য শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবেও কাজ করে।

৫) বীনস এবং ডালসমূহ:
বীনস এবং ডালে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যেমন ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে বীনস এবং ডাল খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ৫৫৪ জনকে নিয়ে করা ৮টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত একটি পর্যালোচনায় জানা গিয়েছে যে, অন্যান্য খাবারের তুলনায় বীনস এবং ডাল SBP এবং উচ্চ রক্তচাপ মানুষের গড় রক্তচাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৬) বেরিস:
বেরি উচ্চ রক্তচাপের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা সহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। বেরিগুলি অ্যানথোসায়ানিন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস। বেরির রং তৈরীতে কার্যকরী অ্যান্থোসায়ানিনগুলি রক্তে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়াতে এবং রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, চকবেরি, ক্লাউডবেরি এবং স্ট্রবেরি হল এমন কিছু বেরি যা রক্তচাপ কমানোর সাথে সরাসরি যুক্ত।

৭) পালং শাক:
বীটের মতো, পালং শাকেও নাইট্রেট বেশি থাকে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামে পূর্ণ এবং এটি উচ্চ রক্তচাপ যুক্ত মানুষদের জন্য চমৎকার কাজ করে। পালং শাকের স্যুপ রক্তচাপ কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।

৮) পেস্তা বাদাম:
পেস্তা অত্যন্ত পুষ্টিকর, এবং তাদের পক্ষে খাওয়া স্বাস্থ্যকর যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার। এগুলিতে পটাশিয়াম সহ হৃদরোগ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ২১টি সমীক্ষার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত সমস্ত বাদামগুলির মধ্যে পেস্তা খাওয়ার ফলে SBP এবং DBP উভয়েই হাইপারটেনশন কমাতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।

৯) গাজর:
গাজর হল একটি মিষ্টি এবং পুষ্টিকর সবজি । গাজরে প্রচুর পরিমাণে ফেনোলিক যৌগ রয়েছে, যেমন ক্লোরোজেনিক, পি-কোমারিক এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড যা রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও গাজর রান্না বা কাঁচা খাওয়া যায়, তবে এগুলো কাঁচা খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশী উপকারী হতে পারে। ৪০-৫৯ বছর বয়সী ২১৯৫ জন মানুষকে নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা গাজর খাওয়ার ফলে সেইসব মানুষের উচ্চ রক্তচাপ প্রায় নিচের দিকে নেমে যায়।

১০) টমেটো এবং টমেটো থেকে তৈরী জিনিস:
টমেটো এবং টমেটো থেকে তৈরী বিভিন্ন জিনিসগুলি পটাশিয়াম এবং ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্ট লাইকোপিন সহ অনেক পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। লাইকোপিন হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উপর উপকারী, এবং টমেটো যুক্ত খাবার খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি সম্পন্ন হৃদরোগের অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি কমাতে সাহায্য করে।

       উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল কম বয়সের ব্যক্তিরাও এখন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। তবে একটি সুবিধা হল যে জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে আপনি এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক