Search
Close this search box.

ওভারিয়ান সিস্ট কি এবং এর লক্ষণ ও চিকিৎসা কি

সাধারণ ভাবে যে কোনও একটি ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য দুটি ওভারিতেই সিস্ট তৈরি হতে পারে। রোগীর ওভারিতে একাধিক সিস্টও থাকা সম্ভব। প্রত্যেক মহিলার ইউটেরাসের দুই ধারে অর্থাৎ ডানদিকে ও বামদিকে দুটি ওভারি বা ডিম্বাশয় থাকে। ওভারি আকারে খুব ছোট হয়। এক একটির আকার হয় প্রায় মার্বেলের মতো। ওভারির মধ্যেই সন্তানধারণের জন্য তৈরি হয় ডিম্বাণু বা এগ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই অঙ্গটি মহিলাদের রিপ্রোডাকশন সিস্টেম বা প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তবে অনেকসময় এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সিস্ট হতে দেখা যায়। সেই কারণে শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের জটিলতা।

ওভারিয়ান সিস্ট কী ?

ওভারির মধ্যে তরল ভর্তি থলি তৈরি হলে তাকে বলে ওভারিয়ান সিস্ট। সাধারণত মেনস্ট্রুয়েশন বা পিরিয়ড চলাকালীন বয়সে, অর্থাৎ যে বয়সে একজন মহিলা রিপ্রোডাকশন সিস্টেম সচল থাকে, সেই বয়সের মধ্যেই এই ধরনের জটিলতা তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। অবশ্য মেনস্ট্রুয়েশন শুরুর আগে বা মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ হওয়ার পর ওভারিয়ান সিস্ট হলে বিপদের আশঙ্কা থাকে বেশি।

ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা কাদের বেশি ?

বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা চলছে ও তার জন্য ওভ্যুলেশন বৃদ্ধির ওষুধ খেতে হচ্ছে এমন হলে ওভারিতে সিস্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া পরিবারে এই অসুখের ইতিহাস থাকলেও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

ওভারিয়ান সিস্ট-এর ধরন

ওভারিয়ান সিস্টকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল— ফাংশনাল সিস্ট এবং প্যাথোলজিক্যাল সিস্ট।

1.ফাংশনাল সিস্ট :- শরীরে হরমোনের তারতম্যের জন্য ওভারিতে ফাংশনাল সিস্ট তৈরি হয়। এই ধরনের সিস্টের থেকে তেমন কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকে না।

2.প্যাথোলজিক্যাল সিস্ট :- প্যাথোলজিক্যাল সিস্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিভিন্ন ধরনের প্যাথোলজিক্যাল সিস্ট তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ডারময়েড সিস্ট, সিস্টাডেনোমাস, এন্ডোমেট্রিয়মাস সিস্ট। এই ধরনের সিস্ট আকারে যথেষ্ট বড় হতে পারে। ওভারিয়ান প্যাথোলজিক্যাল সিস্ট থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বা শারীরিক আপৎকালীন অবস্থা তৈরি হতে পারে। এমনকী দীর্ঘদিন চিকিৎসা না হলে এই সিস্ট থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয় যায় না।

ওভারিয়ান সিস্ট-এর লক্ষণ

শরীরে ফাংশনাল সিস্ট-এর তেমন কোনও রোগ লক্ষণ থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়েও খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর অন্য কোনও কারণে ইউএসজি করাতে গিয়ে ফাংশনাল সিস্ট ধরা পড়ে।

প্যাথোলজিক্যাল সিস্টের বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন, তলপেটে কোনও জায়গা শক্ত হয়ে ফুলে ওঠার মতো বোধ হয়। অংশটি বলের মতো বোধ হয়। এছাড়া ব্যথা হওয়ার অনুভূতিও থাকে কারও কারও। কিছু ক্ষেত্রে অনবরত বমিও হয় রোগীর। অনেকসময় ওভারির সিস্ট পেঁচিয়ে যায়। এই সমস্যাকে বলে ট্যুইস্টেড ওভারিয়ান সিনড্রোম। এমন ক্ষেত্রে রোগীর পেটে খুব ব্যথা হয়। বারবার বমিও হতে পারে। এমনকী এর থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সিস্টের কারণে রক্তপাত হতে পারে।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড টেস্টের মাধ্যমেই সিস্ট নির্ণয় করা হয়ে থাকে। তবে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে গোটা বিষয়টি পরিষ্কার না হলে চিকিৎসক সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করাতেও বলেন রোগীকে।

ওভারিয়ান সিস্ট-এর চিকিৎসা

সাধারণত ফাংশনাল সিস্টের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। শরীরে হরমোনের তারতম্য মিটে গেলে সময়ের সঙ্গে নিজের থেকেই সিস্টের সমস্যা মিটে যায়। রোগীর দৈহিক ওজন খুব বেশি থাকলে, তিনি স্থূলত্বের শিকার হলে, ওজন কমাতে বলা হয়। এছাড়া বেশকিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে হলে চিকিৎসকরা ওষুধও দিয়ে থাকেন।

প্যাথোলজিক্যাল সিস্টের অবশ্যই চিকিৎসা দরকার। তবে ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রধান চিকিৎসা হল ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি। অত্যাধুনিক এই অপারেশনের মাধ্যমে ওভারিকে আঘাত না দিয়ে খুব সহজেই সিস্ট বাদ দেওয়া যায়। ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি হওয়ায় পেটে ছোট ছিদ্র করেই অপারেশন করা যায়। শরীরে একদম ছোট অংশ কাটা হয় বলে রক্তপাত বা অপারেশন পরবর্তী ইনফেকশনের আশঙ্কাও অনেক কম থাকে। এই সার্জারির মাধ্যমে রোগীর শরীরে তেমন ধকল পড়ে না। রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

মনে রাখবেন, ওভারিতে সিস্ট সন্তানধারণের পরিপন্থী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জটিলতাও তৈরি করতে পারে সিস্ট। তাই রোগ ধরা পড়লে অবশ্যই চিকিৎসা করান।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক