বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘রাখে হরি মারে কে?’ সম্প্রতি এই প্রবাদ বাক্যই যেন বাস্তব হয়ে দেখা গেল মাঝ আকাশে! ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার। রাত ৯টায় বেঙ্গালুরু থেকে টেক অফ করে ভিস্তারার ইউকে-৮১৪ বিমানটি। দ্রুত পছন্দের উচ্চতায় পৌঁছে যায় বিমান। মাটি থেকে প্রায় ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় তখন যাত্রীরা ‘জল পানে’ ব্যস্ত। বিমানের সিটের পিছনে রাখা ব্যাগ থেকে দেখছেন কোন কোন সুখাদ্য চেখে নেওয়া যায়। কেউ বা ফিরছেন চিকিৎসা করিয়ে। কেউ যাচ্ছেন ব্যবসা বা চাকরির কাজ সেরে। নানা বিষয়ে মৃদু আলোচনার গুঞ্জন সমস্ত বিমানের পেট জুড়ে। ঠিক এমন সময় ঘটল এমন এক ঘটনা যা হলিউডের সুপারহিরো মুভিকেও মানাবে হার!
সকলেই জানেন বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর অনেক বেশি হালকা। ফলে বায়ুর চাপও কমে যায় দ্রুত। এই কারণে কানের পর্দায় একটা চাপ পড়ে ও ঢোক গিলে নিলে দ্রুত ইউস্টেচিয়ান নালী খুলে গিয়ে কানের মধ্যে থাকা বায়ুর চাপের পরিবর্তন হয়। কমে যায় ব্যথা। খুদেরা এতশত বোঝে না। কান চাপ পড়লেই তারা শুরু করে কাঁদতে। দেখা যায় সব বাচ্চাই যেখানে কাঁদছে সেখানে একটি ২ বছরের শিশুকন্যা যেন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। শিশুকন্যার অভিভাবক দেখেন মেয়ের ঠোঁট ও আঙুল ক্রমশ হয়ে পড়ছে নীলচে। সে একবোরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে!
ক্রু মেম্বাররা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন। দেওয়া হয় ডিসট্রেস কল। ঘোষণা করা হয় ‘একটি শিশুর শারীরিক পরিস্থিতির অবনমন ঘটেছে। বিমানে কোনও চিকিৎসক থাকলে দ্রুত এগিয়ে আসুন।’
ঘটনাক্রমে, ওই বিমানেই উপস্থিত ছিলেন দিল্লি এইমস-এর পাঁচজন চিকিৎসক। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে নিজের আসন ছেড়ে উঠে আসেন ও পরীক্ষা করে দেখেন শিশুটির কোনও পালস নেই। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা সিপিআর দিতে থাকেন (এই বিশেষ পদ্ধতিতে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হার্টকে সচল করার চেষ্টা করা হয়)। হাতের কাছে আইভি ক্যানুলা থাকায় শ্বাসকার্য সক্রিয় রাখতে শিশুটির ওরোফ্যারাঞ্জিয়াল এয়ারওয়েতে আই.ভি ক্যানুলা প্রবেশ করান। নাছোড়বান্দা প্রচেষ্টার মধ্যেই চিকিৎসকরা ক্রু মেম্বারদের জানান, শিশুটির জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন। নাহলে প্রাণ বাঁচানো মুশকিল।
পাইলট বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।
নাগপুরে পৌঁছানোর পর ওই শিশুকে চিকিৎসকের তত্বাবধানে নিয়ে যাওয়া হয় ও শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘটনার কথা জানতে পেরে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, ‘এই জন্যই আপনারা ঈশ্বরের ঠিক পরেই।’
এইমস-এর তরফে সমগ্র ঘটনাটি তাদের অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ভাসকুলার অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল রিডিওলজি কনফারেন্স থেকে ফিরছিলেন অ্যানস্থেশিয়া বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ নভদীপ কউর, কার্ডিয়াক রেডিওলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ দমনদীপ সিং, রেডিওলজি বিভাগের প্রাক্তন সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ ঋষভ জৈন, অবস্টেট্রিকস এবং গাইনিকোলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ ঐশিকা এবং কার্ডিয়াক রেডিওলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ অভিছালা তকশক।
বিমানে শিশুটির অসুস্থতার কথা শুনেই তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সমগ্র ঘটনাটি আসলে, চিকিৎসকদের নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার রীতিকেই প্রতিষ্ঠা করে। জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অটল প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়।
![bronchitis](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2023/12/bronchitis-300x162.jpg)